তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সদস্য। মানবিক গুলাবলিতে অনন্য একজন ছাত্রনেতা। চট্টগ্রামের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, থানা ও ওয়ার্ডে তিনি কাজ করছেন শিক্ষার্থীদের কে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য।
জনতার চট্টগ্রাম’র সাথে একান্ত কিছু আলাপচারীতায় জানতে চাইবো তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
জনতার চট্টগ্রাম- আপনার নিজের সম্পর্কে ও আপনার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে বলুন?
আবু নাছের জুয়েল-প্রথমেই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও তার পরিবারের নিহত সকল সদস্যদের। বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নিহত ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও তিন লক্ষ মাবোনের প্রতি যাদের রক্ত ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু ঘনিষ্ট সহচর এম এ আজিজের পুন্যভূমি চট্টগ্রামের ৩৭ নং ওয়ার্ডে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা।
আমি প্রথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়াশুনা করেছি বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছি ইসলামীয়া ডিগ্রী কলেজ। পরবর্তিতে আইনের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী গ্রহন করি আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম থেকে। এবং বিএ চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে অধ্যায়নরত।
জনতার চট্টগ্রাম-আপনার রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ কখন ও কিভাবে?
আবু নাছের জুয়েল-চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় আমি সামাজিক সংগঠন ইয়াং বয়েজ গঠন করি। যেহেতু বিএনপি /জামায়েত জোট ক্ষমতায় সেহেতু তাদের বাহিরে গিয়ে অন্য সামাজিক সংগঠন করাও তখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। পরবর্তিতে আমার এলাকার একজন ছাত্রনেতা, তিনি তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ছিলেন, যিনি বর্তমানে বন্দর কর্মচারি পরিষদের সাধারন সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করছেন মো. নায়েবুল ইসলাম ফটিক ভাইয়ের হাত ধরেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্প্রীক্ত হই।পরবর্তিতে উনার মাধ্যমে তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু ভাইয়ের সাথে ছাত্ররাজনীতি শুরু করি। ২০০৯ -১০ শিক্ষা বর্ষে দেশে সামরিক শাসন ও জরুরী অবস্থা বিরাজোমান থাকায় কলেজে কোন কমিটি হয় নাই। তবে ছাত্রলীগ ছাত্রসংসদের মননীত ক্লাস কমিটির আমি আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করি। এরপরই মূলত আমি ছাত্রলীগের মূল ধারার রাজনীতির সাথে সম্প্রীক্ত হই। এবং তখন থেকে ছাত্ররাজনীতি দিক্ষা গ্রহন করতে থাকি। মেধা ও মননের সন্নিবেশে নিজেকে ছাত্ররাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করছেন নগর ছাত্রলীগ তৎকালীন শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক জাকের আহমেদ খোকন ভাই।দীর্ঘদিন কোন ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় আমরা সেই সময়ে স্বাধীনতার সপক্ষের সংগঠন এর সাথে কাজ করি। প্রানের ‘৭১ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ফাউন্ডেশন নগর কমিটির সাধারন সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করি।আমার নেতাদের হাত ধরেই পরবর্তিতে আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি(সোহাগ -জাকির) কমিটির সদস্য মননীত হই।
জনতার চট্টগ্রাম-আপনি আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট এম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সে অভিজ্ঞতা বলুন?
আবু নাছের জুয়েল-ছাত্ররাজনীতি করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর ছাত্রজীবনে রাজনীতির স্বীকৃতি আশা করে। আমি সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে অন্যতম। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময় শিশিবের ক্যাম্প হিসেবে সুপরিচিত ছিল। আমরা শিবিরের বাহিরে “বিবেক ” নাম দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশীয় সংস্কৃতি ও স্বদেশী পন্য ব্যাবহারের কাজ করেছি। প্রচন্ড উগ্র নিয়মতান্ত্রিকতা ও শিবিরের এক স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে বের হয়ে একটি মুক্ত চিন্তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ আন্দোলন করেন। পরবর্তিতে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের চাপের মুখে কর্তৃপক্ষ আমাকে সেখানে পদায়ন করেন। যাতে করে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত না হয়। আমার রাজনৈতিক জীবনে এটি একটি বিশাল অর্জন ছিল। আমি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীর নিকট কৃতজ্ঞ।
জনতার চট্টগ্রাম-আপনি কি মনে করেন এম্বাসেডর হিসেবে আপনি সফল?
আবু নাছের জুয়েল-আসলে পরের মাপকাঠি দিয়ে নিজের সফলতা আমি পরিমাপ করি না। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাদের স্বার্থে আঘাত পরেছে তাদের কাছে আমি ব্যার্থ। তবে নিজের কাছে আমি সফল। কারন আমি চেষ্টা করেছি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে ।
জনতার চট্টগ্রাম-করোনা কালীন সময়ে আপনার ভূমিকা কি?
আবু নাছের জুয়েল- করোনা একটি বৈশ্বিক মহামারী, এই ক্ষেত্রে একজন সামান্য ছাত্র রাজনীতির কর্মীর কিছু করার ক্ষমতা অনেক কম। সাধ্যের মধ্যে সবটুকুই আমি আমার সংগঠন আমরা করেছি। যদি নিজে সরাসরি করতে না পারি সে ক্ষেত্রে সাহায্য নিয়েছি অন্যকারো কাছ থেকে। তারপরও এই পুরো করোনাকালীন সময়ে জন মানুষের কাছে ছিলাম।অক্সিজেন সেবা,ডাক্তারের সেবা গ্রহন করানো, খাদ্য সাহায়তা প্রদান, অজ্ঞাতসারে মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোকে সহায়তা করা এমন সকল কার্যক্রম আমি গ্রহন করেছি। এর মধ্যে প্রচার যোগ্য খবর তো আপনারাই প্রচার করেছেন।
জনতার চট্টগ্রাম-আপনার কি মনে হয় বর্তমানে করোনার পরিস্থিতি কি?
আবু নাছের জুয়েল-মহামারিকে চিরতরে ধ্বংস কিংবা বিনাশ করা যায় না। এটাকে নিয়ন্ত্রন করা যায়। পুরো করোনাকালীন সময়ে আমাদের দেশে বহু পরিবার অভিভাবক শূন্য হয়েছে। আর মহামারি নিয়ে কাজ করার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম দিকে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হলেও বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, বাংলাদেশে জনমানুষের নেত্রী, দেশরত্ন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষন নেতৃত্ব ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারনে এবং ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরনের কারনে ইনশাল্লাহ করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত।
জনতার চট্টগ্রাম-আপনি সদ্য সাবেক ছাত্রনেতা আপনার মতে ছাত্ররাজনীতি কেমন হওয়া উচিত?
আবু নাছের জুয়েল-আসলে ছাত্ররাজনীতি এখন অনেকটাই ছাত্রদের থেকে ছিন্তাই হবার পথে। টোকাই, অশিক্ষিত, অনুপ্রবেশকারী, চাকুরিজীবি, নিজেকে ছাত্রনেতা দাবি করে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে তার যোগাযোগ নাই সে ছাত্রনেতা। ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের হাতেই নিরাপদ। তাই ছাত্ররাজনীতি হতে হবে গঠনতন্ত্রিক ও আদর্শ নির্ভর।
জনতার চট্টগ্রাম-আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আবু নাছের জুয়েল-অদৃষ্টের স্রষ্টা আমি নই। যেহেতু রাজনীতির সাথে জড়িত তাই সকল রাজনীতিবিদের মতন আমিও চাই জনগনের সেবা মূলক কাজ করার। আর আমার পরিকল্পনা সব সময় নিজেকে তৈরি করা যেন কখনো কোন দায়িত্ব কাঁধে আসলে আমি তা করার মতন যোগ্য হয়ে উঠতে পারি। সেজন্য আমার একমাত্র পরিকল্পনা নিরবিচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া।
জনতার চট্টগ্রাম-আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সাথে এতক্ষন সময় দেবার জন্য?
আবু নাছের জুয়েল- জনতার চট্টগ্রাম পত্রিকার সকল পাঠক সমাজের জন্য রইলো শুভেচ্ছা ।