‘সবাইকে একটু দেরিতে হলেও,
ঈদ মুবারক…….
করোনাকালীন সময়ে
আমরা প্রায় প্রতিদিনই নানান ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি।

করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন আমাদের পরিচিত প্রিয়জন বা আত্মীয় স্বজন…
আমার পরিবারেও অনেকেই আক্রান্ত হয়ে, করোনার সাথে যুদ্ধ করে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন।
আবার পরিচিত অনেকেই পৃথিবী ছেড়ে চলেও গেছেন….

এভাবেই দুটো ঈদ পার করলাম আমরা।
রোজার ঈদে কোন কাজ করিনি।
প্রায় চার মাস ঘরে বন্দী থাকার পর জীবিকার টানে, জীবনের প্রয়োজনে, কোরবানীর ঈদে কাজ শুরু করেছিলাম এক রকম জীবন ঝুঁকি নিয়েই…
একটানা প্রায় ২০ দিন, প্রতি মুহূর্তে আতংক নিয়ে শ্যুটিং করে,
আবার ঘরে ফেরা।

করোনা আতংকের পাশাপাশি কাজে ফেরার আনন্দটাও ছিল আকাশ ছোঁয়া….
থেমে যাওয়া জীবনটা আবার সচল হওয়ার আনন্দ।

ঐ আনন্দ নিয়েই ঈদের অবসর কাটানোর স্বপ্ন দেখা…
নতুন নাটক দিয়ে দর্শককে বিনোদিত করা…
কিন্তু ঈদের দিন দুপুর বেলা আমাদের প্রানপ্রিয় মাসিমা,
দূরারোগ্য ক্যান্সার এবং করোনা আক্রান্ত হয়ে পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
চোখের সামনে দেখলাম,
এই দুঃসময়ে কারো মৃত্যু, আপনজনদের কত গুণ বেশি অসহায় করে দেয়!
মাসির সন্তানদের শান্ত্বনা দেবার কোন ভাষা ছিল না।

এই দুঃসময়ে, এ রকম অসহায় মৃত্যু যেন কোন পরিবারে না ঘটে,
যে মৃত্যু,আপনজনের মুখটা শেষ বারের মত দেখতে দেয় না,শেষ স্পর্শ টুকু করতে দেয় না।

আপনারা মাইক্রোবাসটির যে ছবি দেখতে পাচ্ছেন, ঐদিন,
ঐ গাড়িতে যারা এসেছিলেন,
শেষকৃত্যের আয়োজন করতে,
আমার লেখাটি মূলত: তাঁদের উদ্দেশ্যে….
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের একদল স্বেচ্ছাসেবী কর্মী।
ওরা এসে সবকিছু বুঝে নিল।
আমার মাসির মৃত দেহ, ওরা ধর্মীয় রীতি মেনে স্নান করানো থেকে শুরু করে পোস্তগোলা শ্বশানে দাহ করানো পর্যন্ত….সব কিছু।

ওদের বয়স ২০ থেকে ৩০বছরের মধ্যে।
ওরাই হয়ে গেল আমার মাসির শেষ আপনজন।
দুর থেকে আমি দেখছিলাম,আর চোখের জল ফেলছিলাম।
এভাবেই নিজ চোখে দেখলাম, অপরিচিত কিছু ছেলে মেয়ে,কি ভাবে আত্মার আত্মীয় হয়ে গেল!!
আর আমরা?

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরির ফেসবুক স্ট্যাটাস

মাসির সন্তানেরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে দেখলাম আমাদের পরম আত্মীয়দের সকল কর্ম,
যা আমাদের করবার কথা ছিল।
স্যালুট জানাই আমাদের এই পরম আত্মীয়দের।
একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন তো,আমরা কি পারবো….
ওদের মত এই মহৎ কাজটি করতে?
আমি ওদের সাথে কথা বলে জেনেছি,
স্বেচ্ছায় ,বিনা পারিশ্রমিকে, ওরা এই মহৎ কাজটি করছে প্রতিদিন …..দিনে রাতে।

হ্যাঁ….
মানুষ আসলে ওরাই…
এভাবেই আমরা আমাদের সত্য আত্মীয়ের দেখা পেলাম।
মানুষ তো আমরাও…..
ওদের থেকে নিজেদের পার্থক্য বোঝার সময় কিন্তু এসে গেছে।

আসুন না,
আমরাও ওদের মত মানুষ হই….
স্যালুট,
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সহ,এরকম কিছু সংগঠনের ,এমন কিছু মানুষ,
যারা এই সংকটে,জীবনের ঝুঁকি নিয়ে,
এই মহৎ কর্মটি করে চলেছেন…
আমাদের পরম আত্মীয়রা…..’

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরির বাড়ির সামনে রাখা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাইক্রোবাস

কথাগুলো নিজের ফেসবুকে লিখেছেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরি। করোনাকালীন এই সময়ে এক অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছেন। বলেছেন মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, সহমর্মিতার কথা। অন্য ধর্মের হলেও মানুষ মানুষের কতটা আপন এবং মানবিক হতে পারে সেই বিষয়গুলোই তুলে ধরেছেন।

করোনাকালীন জীবন আমাদের আপনজনকেও করেছে পর। মহামারি এই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশের সৎকার তো দূরের কথা শেষ দেখাটাও হচ্ছে না অনেকের। অবশ্য এর কিছুটা বাস্তবতাও আছে।

উল্লেখ্য, আত্মনির্মাণ ও সৃষ্টির সেবায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ২৮ বছর ধরে কাজ করছে বাংলাদেশে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে লাশ দাফন ও সৎকার কার্যক্রম। করোনাকালে যখন সন্তান মা-বাবার লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে তখনই করোনায় শহীদদের সম্মানজনক শেষ বিদায় জানাতে এগিয়ে এসছে কোয়ান্টাম। করোনাকালে এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ১৮’শর বেশি মৃতের শেষ যাত্রায় সেবা দিয়েছেন কোয়ান্টাম স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। করোনায় মৃত্যুবরণ করা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের মানুষের ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে তাদের সৎকার করে যাচ্ছে।

দাফন কার্যক্রমের সৎকার কাজের পুরো প্রক্রিয়ার ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, সেফটি গ্লাস, ফেস শিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, হেভি গ্লাভস, নেক কভার ও মরদেহের কাফনের কাপড় সবকিছুই কোয়ান্টামের নিজস্ব অর্থায়নে সংগ্রহ করা হয়। মরদেহ বহনের জন্য বিশেষ বডি ব্যাগসহ সুরক্ষার জন্যে তিন ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি মরদেহ সৎকারের পর সুরক্ষার জন্য পিপিইসহ পরিধেয় অন্যান্য সামগ্রী কবরস্থানেই পুড়িয়ে ফেলা হয়।

প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যেতে পারে এই নম্বরে-সালেহ আহমেদ-01306413163 ও মোশতাক আহমেদ-01820250014 ও মারুফ-01713424301

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।