বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্ট চট্টগ্রামের পক্ষে নবীনগরের বাসিন্দা লেখক খন রঞ্জন রায়ের সার্বিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বীরবিক্রম আব্দুল মান্নানের অবহেলিত সমাধিস্থানে সৌধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গবেষণা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহাফুজুর রহমানের নেতৃত্বে সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা করার সময় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে খন রঞ্জন রায়কে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু ছৈয়দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন বিশ্বাস এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ধনঞ্জয় বড়–য়া। ৭ ডিসেম্বর সমন্বয়ক খন রঞ্জন রায় সহ উৎসাহী আরো মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে কবরের নির্দিষ্ট স্থান পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ উদ্দিন সোহাগ বীরবিক্রমের কবরের পবিত্র মাটিতে দাঁড়িয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে নান্দনিক নকশা প্রণয়ন করে স্থায়ী স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণের তাৎক্ষণিক আদেশ জারী করেন।জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান বীরবিক্রমের কবরের বিষয়টি জেনে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
লেখক খন রঞ্জন রায়ের বলেন,মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে মদুনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্ভুল অপারেশন ছিল এক অবিস্মরণীয় সাফল্য। এতে দখলদার পাক বাহিনির মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। এই সফলতার ঢেউ সারা বাংলাদেশের মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে চাঙ্গা করে তোলে। এই যুদ্ধের মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীণ পুলিশ বাহিনি থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া অকুতোভয় তরুণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরের সন্তান আব্দুল মান্নান। সফল অপারেশন শেষে প্রতিপক্ষের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে আব্দুল মান্নান আহত হন। সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে হালদা নদীর অপর পাড় আবুরখিল গ্রামে নিয়ে সাধ্যমতো চিকিৎসা ও শুশ্রুষা করা অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। উক্ত অপারেশন কমান্ডার ফ্লাইট ল্যাফটেনেন্ট পরবর্তীতে এয়ার ভাইস মার্শাল ও বিমান বাহিনি প্রধান সুলতান মাহমুদের ইমামতিতে গোপনীয়-সংক্ষিপ্ত নামাজের জানাজা শেষে আবুরখিল গ্রামের ঢাকাখালী খালের জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পরবর্তীতে সরকার আব্দুল মান্নানকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করেন। তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৩৬। দীর্ঘ ৫০ বছর এই বীরবিক্রমের কবর চরম অবহেলায় পুঁতিগন্ধময় স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান বীরবিক্রমের কবরের বিষয়টি জেনে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।